হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের রোমাঞ্চকর ফাইনালে রোববার দুই দলকে আলাদা করল কেবল বাউন্ডারির হিসাব। বেশি বাউন্ডারি মেরে প্রথমবার ওয়ানডে বিশ্বকাপ জিতল ইংল্যান্ড। ক্রিকেটের জন্মভূমি, ওয়ানডের জন্ম যেখানে, সেই দেশ অবশেষে বিশ্বকাপ জিতল নিজেদের আঙিনায়।
এমন ম্যাচে কাউকে পরাজিত বলা কঠিন। তবু কেবল নিয়মের খাতিরেই ট্রফি অধরা রইল নিউ জিল্যান্ডের।
টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা নিউ জিল্যান্ড তুলেছিল ২৪১ রান। শেষ বলে রান আউটে অলআউট হয়ে ইংল্যান্ডও থামে ২৪১ রানে। সুপার ওভারে ইংলান্ড গড়েছিল ১৫ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর। এবার ওভারের শেষ বলে রান আউটে নিউ জিল্যান্ড থামে ১৫ রানেই। সুপার ওভারসহ ম্যাচে ইংলিশদের চার ও ছক্কা ছিল মোট ২৬টি, নিউ জিল্যান্ডের ১৭টি। ট্রফির ভাগ্য লেখা হয়েছে এখানেই।
তিন বছর আগে কলকাতায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালের শেষ ওভারে বেন স্টোকস চার ছক্কা হজম করায় হেরেছিল ইংল্যান্ড। এবার সেই স্টোকসের বীরত্বেই ইংল্যান্ড ঘুচিয়েছে ওয়ানডে বিশ্বকাপের ট্রফি খরা।
মূল ম্যাচে শেষ পর্যন্ত ইংল্যান্ডের আশা জিইয়ে রেখেছিলেন স্টোকসই। শেষ ওভারে তার একটি ছক্কা ও তার ডাইভে ভাগ্যের ছোঁয়ায় পাওয়া ৬ রানই ইংল্যান্ডকে এগিয়ে নেয় টাই করার পথে। অপরাজিত থাকেন তিনি ৮৪ রানে। এরপর সুপার ওভারেও দলের ১৫ রানের ৮ রান করেছেন স্টোকস।
মূল ম্যাচের শেষ ওভারে ইংল্যান্ডের দরকার ছিল ১৫ রান। ট্রেন্ট বোল্টের করা প্রথম দুই বলেই রান নিতে পারেননি স্টোকস। তৃতীয় বলে বল পাঠান বাউন্ডারিতে। পরের বলে সেই ডাইভ, হয়তো ইংল্যান্ডের ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ডাইভ!
মিড উইকেটে বল পাঠিয়ে দ্বিতীয় রানের জন্য ছুটছিলেন স্টোকস। সীমানা থেকে মার্টিন গাপটিলের থ্রো সরাসরি যাচ্ছিল স্টাম্পের দিকে। নিজেকে বাঁচাকে ডাইভ দেন স্টোকস। বল তার গায়ে লেগে ফাঁকা জায়গা দিয়ে চলে যায় বাউন্ডারিতে। দৌড়ে ২ রানের সঙ্গে ওই চারে আসে মোট আরও ৬ রান।
২ বলে তখন প্রয়োজন ৩। পঞ্চম বলে ২ রানের চেষ্টায় রান আউট আদিল রশিদ, শেষ বলে ২ রানের চেষ্টায় রান আউট মার্ক উড। একটি করে রান হওয়ায় ম্যাচ টাই।
ম্যাচে খুব ভালো বোলিং করতে না পারা ট্রেন্ট বোল্ট ভালো করতে পারেননি সুপার ওভারেও। স্টোকস ও বাটলারের একটি করে বাউন্ডারিসহ আসে ১৫ রান।
সুপার ওভারে খুব ভালো করতে পারেননি ইংল্যান্ডের বোলার জফরা আর্চারও। প্রথম বলে দেন ওয়াইড। দারুণ শটে দ্বিতীয় বল জিমি নিশাম ফেলেন গ্যালারিতে। শেষ পর্যন্ত নায়ক হতে পারেননি নিশাম বা মার্টিন গাপটিল। শেষ বলে প্রয়োজন ছিল দুই। দ্বিতীয় রানের চেষ্টায় রান আউট হন গাপটিল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নিউ জিল্যান্ড: ৫০ ওভারে ২৪১/৮ (গাপটিল ১৯, নিকোলস ৫৫, উইলিয়ামসন ৩০, টেইলর ১৫, ল্যাথাম ৪৭, নিশাম ১৯, ডি গ্র্যান্ডহোম ১৬, স্যান্টনার ৫*, হেনরি ৪, বোল্ট ১*; ওকস ৯-০-৩৭-৩, আর্চার ১০-০-৪২-১, প্লাঙ্কেট ১০-০-৪২-৩, উড ১০-১-৪৯-১, রশিদ ৮-০-৩৯-০, স্টোকস ৩-০-২০-০)।
ইংল্যান্ড: ৫০ ওভারে ২৪১ (রয় ১৭, বেয়ারস্টো ৩৬, রুট ৭, মর্গ্যান ৯, স্টোকস ৮৪*, বাটলার ৫৯, ওকস ২, প্লাঙ্কেট , আর্চার ০, রশিদ ০, উড ০; বোল্ট ১০-০-৬৭-০, হেনরি ১০-২-৪০-১, ডি গ্র্যান্ডহোম ১০-২-২৫-১, ফার্গুসন ১০-০-৫০-৩, নিশাম ৭-০-৪৩-৩, স্যান্টনার ৩-০-১১-০)।
ফল: ম্যাচ ও সুপার ওভার টাই, বাউন্ডারিতে এগিয়ে থেকে চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড।
ম্যান অব দা ম্যাচ: বেন স্টোকস
ম্যান অব দা টুর্নামেন্ট: কেন উইলিয়ামসন